
ইইউয়ের কড়াকড়িতে পড়ছে ফেসবুক, টুইটার, টিকটক

বিভ্রান্তিমূলক কনটেন্টে লাগাম টানা, বেআইনি কনটেন্ট অপসারণ এবং শিশু-কিশোরদের সুরক্ষায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বড় অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোর জন্য কড়া নিয়ম চালু করছে। এ ক্ষেত্রে কোনো ত্রুটি থাকলে বার্ষিক আয় থেকে জরিমানা দিতে হবে প্ল্যাটফর্মগুলোকে।
টিকটক, টুইটার, ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রামকে ইইউ এর কনটেন্ট ফেডারেশন আইন- ‘ডিজিটাল সার্ভিস অ্যাক্ট’–এর অধীন কড়া নিয়ম মেনে চলতে হবে।
গতকাল শুক্রবার পলিটিকোর এক খবরে এসব তথ্য জানা যায়। সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, বিশ্বের বড় প্রযুক্তি প্ল্যাটফর্মগুলোকে বিভ্রান্তিমূলক কনটেন্টের ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে এবং অনলাইনে শিশুদের আরও ভালোভাবে সুরক্ষিত করতে হবে।
ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের অধীন কতজন ইউরোপীয় অনলাইন প্ল্যাটফর্ম সেবা ব্যবহার করে, তা জানানোর জন্য গতকাল মধ্যরাত পর্যন্ত সময় ছিল। যেসব প্ল্যাটফর্ম ও সার্চ ইঞ্জিনে ৪ কোটি ৫০ লাখের বেশি ইউরোপীয় ইউনিয়নের ব্যবহারকারী রয়েছেন, তাদের ‘ডিজিটাল সার্ভিস অ্যাক্ট’–এর এই নিয়ম মেনে চলতে হবে। এই বছরের গ্রীষ্ম থেকেই এসব নিয়ম মেনে চলতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে, বেআইনি বিষয়বস্তু দ্রুত অপসারণ করা, বিভ্রান্তিমূলক কনটেন্ট সীমিত করা এবং ইউরোপীয় কমিশনের তত্ত্বাবধানে শিশু-কিশোরদের আরও ভালোভাবে সুরক্ষা দেওয়া।
গতকাল একটি ব্লগ পোস্টে টিকটক জানিয়েছে, ২০২২ সালের আগস্ট থেকে ২০২৩ সালের জানুয়ারির মধ্যে ইউরোপের গড়ে মাসে ১২ কোটি ৫০ লাখ সক্রিয় ব্যবহারকারী রয়েছেন।
গত সপ্তাহে মেটা জানিয়েছিল, ২০২২ সালের জুন থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে ফেসবুকে মাসে গড়ে প্রায় ২৫ কোটি ৫০ লাখ এবং ইনস্টাগ্রামে প্রায় ২৫ কোটি সক্রিয় ইইউয়ের ব্যবহারকারী ছিলেন।
টুইটার জানিয়েছে, গত ৪৫ দিনে ইউরোপীয় ইউনিয়নে গড়ে প্রায় ১০ কোটি ১০ লাখ ব্যবহারকারী রয়েছেন। এ ছাড়া ইউটিউবে আছেন ৪০ কোটি ১০ লাখের বেশি ইইউ ব্যবহারকারী।
ইউরোপীয় কমিশনের তদন্তে বড় অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোর যদি কোনো ত্রুটি ধরা পড়ে, তবে কমিশন এই প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানগুলোর বার্ষিক বৈশ্বিক রাজস্বের ৬ শতাংশ পর্যন্ত জরিমানা করতে পারবে। প্রতিষ্ঠানগুলোর অ্যালগরিদম এবং প্ল্যাটফর্মগুলো কতটা বিপজ্জনক, তা তদারকির দায়িত্বে থাকবে বাইরের প্রতিষ্ঠান। অনলাইন প্ল্যাটফর্মের অভ্যন্তরীণ গুরুত্বপূর্ণ কিছু আধেয় পরীক্ষা করতে পারবেন গবেষকেরা।
বিভ্রান্তি ছড়ানো ও কিছু আধেয়র কারণে ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব এবং টিকটকের মতো বড় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো তদন্তের মধ্যে আছে। কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর আধেয় থাকায় ইনস্টাগ্রাম সমালোচিত হয়েছে।
বড় অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোকে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট বলবৎ করতে তহবিল হিসেবে প্রতিবছর বার্ষিক সম্পদের শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ অর্থ ইউরোপীয় কমিশনকে দিতে হবে। ছোট প্ল্যাটফর্মগুলোর জন্য ইইউ কিছুটা নমনীয়। তাদের অবৈধ আধেয়র ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। তাদের জন্য আইনটি ২০২৪ সাল থেকে প্রযোজ্য হবে।
টিকটক তাদের ইউরোপীয় ব্যবহারকারীদের নিরাপদ ও সুরক্ষিত রাখতে পদক্ষেপ নিয়েছে। আগামী মার্চ মাসে আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে টিকটকের ইউরোপীয় সদর দপ্তরে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহির জন্য একটি কেন্দ্র চালু করা হবে। এ ছাড়া বেলজিয়াম, ফ্রান্স এবং জার্মানিসহ ইউরোপের ১০টি দেশে তাদের ৫ হাজারে বেশি কর্মী কাজ করছে। ইউরোপের ব্যবহারকারীদের ডেটা ইউরোপের তিনটি ডেটা সেন্টারে রাখবে বলে ঘোষণা দিয়েছে টিকটক। এর দুটি হবে আয়ারল্যান্ডে এবং আরেকটি হবে ইউরোপের অন্য কোনো একটি দেশে।