তোমায় সেদিন দেখেছিলাম
- কিরে বান্ধবী তাড়াতাড়ি উঠ আর কত ঘুমাবি,,?
- এই কি এমন কেন রে,,? একটু শান্তি করে ঘুমাতে দিচ্ছিস না,,,
- ঠিক আছে তুই ঘুমা তাহলে,,, আমি ভার্সিটিতে চলে গেলাম,,
- বলিস কি আজকে কি আমাদের ভার্সিটি যাওয়ার কথা ছিল,,
- কেন তোর মনে নেই আজকে আমাদের নবীন বরণ,,,
নবীনবরণ কথা শোনার সাথে সাথেই বিছানা থেকে লাফ দিয়ে উঠে প্রমি। যে হচ্ছে এই গল্পের প্রধান নায়িকা। আর যে ওর মেয়ের ঘুম ভাঙ্গাচ্ছে, সে হচ্ছে তার একমাত্র প্রাণপ্রিয় বান্ধবী শুধা। দুজনের বন্ধুত্ব এতটাই গভীর যা দেখে মনে হয় পৃথিবী একদিকে আর তারা দুজন আরেক দিকে। নবীন বরণের কথা শুনে প্রমি শুধা বলে,,
- আমার তো একদমই মনে নেই, আর তুই কেমন রে আমাকে ডাক দিবি না,,
শুধা নিজের হাতে কাপড় গুলো বিছানায় রেখে বলে,,
- নেও এবার,, যার জন্য করলাম চুরি সেই বলে চোর,, তুই যে পড়ে পড়ে জলহস্তির মতো ঘুমাচ্ছিস সেই দিকে কি তোর খেয়াল আছে, সে কখন থেকে ডাকছি,,
- হয়েছে হয়েছে, আর কত শোনাতে হবে না,, এখন যা রেডি হও আমি একটু সাজুগুজু করে আসি, প্রথম দিন বলে কথা একটু না সাজলে হয়,,,
- দেখিস আবার সাজুগুজু করতে গিয়ে দিন পার করে দিস না,,,ছেলেরা নাইলে লাইন লেগে যাবে।
এরপর দুজনের রেডি হয়ে তাদের ভার্সিটির উদ্দেশ্যে চলে যায়। তারা দুজনেই এবার অনার্স ফার্স্ট ইয়ারে। আজকে তাদের নবীন বরণ। ভাগ্যক্রমে দুইজনে একই ভার্সিটিতে এবং একই বিষয়ে চান্স পেয়েছে। যথারীতি তারা ভার্সিটির গেটের সামনে এসে রিক্সা থেকে নেমে পড়ে। ভেতরে প্রবেশ করতেই শুধা একটু পিছিয়ে পড়ে, ওর মেয়ের ঘাড় ঘুরিয়ে শুধা দিকে তাকিয়ে সামনের দিকে হাঁটতে থাকে। যার ফলে হঠাৎ সে একটা ছেলের সাথে ধাক্কা খেয়ে বসে,,। এবং সাথে সাথে ছেলেরা হাত থেকে মোবাইলটা নিচে পড়ে যায়,,,,
- What...
- সরি সরি সরি আমি একদমই বুঝতে পারিনি,মাফ করবেন
- ভালোভাবে হাঁটতে পারো না তো একাই কেন বের হয়েছো,,,
- দেখুন আমি সরি বলেছি, এরপরও আপনি আমাকে এভাবে বলতে পারেন না,,,
এরপর ছেলেটা কিছু একটা বলতে যাবে সাথে তার ফোনে ফোন আসে। সে ফোনটা মাটি থেকে তুলে রিসিভ করে,,,
- কিরে আয়ান কোথায় তুই,,, তাড়াতাড়ি অডিটরিয়ামে চলে আয়,,,
এই গল্পের হিরো তাহলে আয়ান। দেখতে বেশ সুদর্শন। সেও এই ভার্সিটির তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। আর আজ নবীন বরণের উপস্থাপনার দায়িত্বটা তার ওপরে এসেই পড়েছে। বেশ মেধাবী। তাই ভার্সিটি প্রায় সবাই তাকে চেনে। স্যারদেরও বেশ পছন্দের।
ফোন পেয়ে আয়ান মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বিরক্তিকর ভাবে তাকিয়ে চলে গেল।
পিছন থেকে শুধা এসে জিজ্ঞেস করল,
- কিরে কি হল তোর,,
- আর বলিস না ভার্সিটি প্রথম দিনের মুড নষ্ট হয়ে গেল,,
- কেনরে কি হয়েছে,,
- সব আমার কপাল, এসে একটা ছেলের সাথে ধাক্কা খেলাম, সরিও বললাম, এরপর ছেলেটা আমাকে বলল আমি নাকি ভালো করে হাঁটতে পারিনা, কেমনটা লাগে বল,,,
- হাহাহাহা,, ভার্সিটির প্রথম দিনে একটা গণ্ডগোল ঘটিয়ে ফেললি,,
- ছেলেটাকে দেখে মনে হলো আমাদের ইয়ার এ পড়ে,, ঠিক আছে আমিও মজা দেখাবো,,
এরপর যেখানে নবীন বরণের আয়োজন করা হয়েছে তারা দুজন সেই রুমে গিয়ে সিটের মধ্যে বসে। পাশে আরেকটা মেয়ে এসে বসে। যেহেতু প্রথম দিন তাই একটু পরিচয় হয়ে নেওয়া ভালো। এই ভেবে প্রমি সেই মেয়েটিকে বলে,,,
- তুমি কি এবার ফার্স্ট ইয়ার,,
- হ্যাঁ তুমি,,
- আমিও, তা তোমার নাম কি,,
- অন্তি,, আর তুমি
- আমি প্রমি আর এ হচ্ছে আমার একমাত্র বান্ধবী শুধা,,
- হাই শুধা,,
- হাই,,
এরপর তিনজন মিলে গল্প করতে থাকে। অন্তি মেয়েটা ভারী মিষ্টি। খুব সহজেই প্রমি আর শুধার মন জয় করে ফেলল। প্রথম পরিচয় অনেকটা ভালো বন্ধুত্ব করে উঠলো তাদের মাঝে। ধীরে ধীরে সবাই চলে এলো।
এরপর স্যাররা এসে স্টেজে উঠে ওনাদের আসন গ্রহণ করল। একটু পরে মাইক্রোফোন হাতে আয়ান স্টেজে উঠলো। আয়ানকে দেখার সাথে সাথে প্রমি বিরক্তিকর ভাব নিয়ে শুধা বলল,,,
- দেখ এই সে বজ্জাত ছেলেটা,,,
- ও আচ্ছা তাহলে এর উপরে থাকা খেয়েছি,,, তবে ছেলেটা কিন্তু বেশ হ্যান্ডসাম,,,
- কি বলিস তোর মাথা ঠিক আছে ,, এটাকে হ্যান্ডসাম বলতেছি তাই না,,
- এই তোমরা কি নিয়ে কথা বলছো (অন্তি)
- আর বোলো না, ভার্সিটিতে আসার সাথে সাথে এই বজ্জাত ছেলেটার সাথে ধাক্কা খেয়েছি,, এর জন্য সরি বলেছি তারপরও কি দেমাক,,,
প্রমি এই কথা শুনে অন্তিম মুখ চেপে চেপে হাসতে থাকে,,
- কি বেপার তুমি এভাবে হাসতাছো কেন ,,
- না কিছু না,,,
তাদের নবীন বরণের অনুষ্ঠান শেষ হয়ে গেল। এরপর যথারীতি যে যার বাসায় গেলাম। আই এম তার বাসায় গিয়ে ফ্রেশ সোফায় বসে মোবাইল টিপছিল। এমন সময় পিছন থেকে এসে কেউ একজন মেয়েলি কন্ঠে আয়ান কে বলল,,,,
- কিরে ভাইয়া আপনাকে কোন ফার্স্ট ইয়ারে মেয়ের সাথে তুমি ধাক্কা খেয়েছো,,,
( আয়ান মাথা ঘুরিয়ে দেখে অন্তি দাঁড়িয়ে তারমানে অন্তি হচ্ছে আয়ান এর ছোট বোন)
- তুই কিভাবে জানলি,,,, মেয়েটা কি তোদের ডিপার্টমেন্টের,,,
- এমন ভাব করছে মনে নবীন বরণের সময় তুমি আমাদের দিকে তাকাওই নাই,,,
- জি না আমি কারো দিকে তাকাইনি এখন তুই বল কিভাবে জানলি,,
- কিভাবে আবার আমার পাশে বসে সেই মেয়েটা বলল, প্রথম দিনে একটা বজ্জাত ছেলের সাথে ধাক্কা খেলাম,,,
- কি এত বড় সাহস আমাকে বজ্জাত বলেছে,, আমাকে বজ্জাত বলার সাহস কোথা থেকে পায় দেখছি আমি,,, আর শোন তুই ওই মেয়ের সাথে মিশতে যাস না ওই মেয়েতো ভালোভাবে হাটতে পারেনা পরে দেখবি তোকে নিয়ে কথাও পড়ে যাবে,,,
- তবে ভাইয়া যায় বল মেয়েটা কিন্তু হেবি দেখতে তোমার সাথে ভালই মানাবে,, হি হি হি হি,,,
- তুই এবার আমাদের মার খাবি,,,,
অন্তি সেখান থেকে দৌড়ে পালিয়ে যায়। আয়ান ও অন্তির পেছনে দৌড়াতে দৌড়াতে অন্তিকে ধরে ফেলা এবং তার চুল টান দিয়ে ধরে,,, এর জন্য অন্তি চিল্লাতে থাকে,,,
- আম্মু আম্মু তোমার ছেলে আমাকে মেরে ফেললো বাঁচাও,,,
অন্তির চিৎকার শুনে রান্নাঘর থেকে তার আম্মু একটা বেলন নিয়ে বের হয়ে আসে।
- তোরা আবার শুরু করছিস তাই না আজ দুজনকে দেখাচ্ছি মজা,,,
তাদের মাকে দেখে আয়ান অন্তিকে ছেড়ে দিয়ে সাধু ছেলের মত দাঁড়িয়ে থাকে। আর এমন ভাব করতে থাকে যেন সে অন্তিকে কিছুই করেনি। এটা দেখে তাদের আম্মু অন্তিকে জিজ্ঞেস করে,,,
- কিরে তোর ভাই তো তোকে মারেনি তাহলে চিৎকার করছিস কেন,,,
- তোমাকে দেখে ভয় পেয়ে ছেড়ে দিয়েছে,,,
- আম্মু তাড়াতাড়ি এই আপদ টাকে বিদায় করো তো,,, আমার কাছে একটা ল্যাংড়া ছেলে আছে তার সাথে এর বিয়ে দিয়ে দেই নাকি,,, (আয়ান)
- তোমার বিয়ে করতে ইচ্ছে করে তুমি করো এই ল্যাংড়া ছেলেকে বিয়ে আমার বয়েই গেছে,,, আম্মু তোমার ছেলে কিছু বলবে না, কিছু বললেই খালি বলে বিয়ে দিয়ে বিদায় করবো,, ভালো লাগেনা কিন্তু,,,
- তোরা দুই ভাই-বোন যে আর কবে বড় হবি আল্লাহই জানে,,
মা-বাবা আর দুই ভাই বোন মিলে এই আয়নের পরিবার। তাদের বাবা দেশের বাইরে থাকেন। দুই ভাই বোন মিলে শুধু ঝগড়া করে এতটা ঝগড়া করে মনে হয় ঝগড়া না করলে তাদের দিনটাই কাটতে চায় না। আর তাদের এই ঝগড়া বন্ধ করতে তাদের মা প্রায় হিমশিম খেয়ে যায়। তবে আয়ান তার বোনকে প্রচন্ড ভালোবাস। যখন যা চায় সাথে সাথে সেই আবদার পূরণ করে দেয়।
বিয়ের কথা শুনে অন্তি মন খারাপ করে রুমে গিয়ে বসে থাকে,,। আয়ান তার পিছে পিছে গিয়ে অন্তি কে বলে,,,
- কিরে বুড়ি মন খারাপ করে আছিস কেন,,
- যাও আমার সাথে কথা বলতে আসবে না, আমি তো তোমাদের বোঝা তাই আমাকে বিয়ে দিলেই তো বাঁচো তোমরা,,
- বাহ বা,, বোনটি দেখে আমার ভীষণ রাগ করেছে,, আমি যদি আমার বোনকে নিয়ে কালকে বিকেলে শপিংয়ে যাই তাহলে তার রাগ কি কমবে,,
শপিং এর কথা শুনেই অন্তি লাভ দিয়ে উঠে বলে,,
- হ্যাঁ হ্যাঁ কমে যাবে এখন তাড়াতাড়ি চলো,,,
- আরে পাগলি এখন না কালকে যাব ,,,
অন্তি মুখ কিছুটা ফুলিয়ে বলে,,
- ঠিক আছে,,,
অবশেষে অন্তির মন খারাপ ভালো হয়ে গেল। এদিকে প্রমি এসে তার ব্যাগ থেকে কাপড় বের করতে থাকে। একটা একটা করে সবগুলো কাপড় বের করতে দেখে শুধা প্রমিকে জিজ্ঞেস করে,,,
- কিরে এভাবে সব কাপড় গুলো বের করছিস কেন,,
- আমার একটা নতুন কাপড় ও নেই যে আগামী পরশু তা পরে ভার্সিটিতে যাব,,
প্রমি কথা শুনে শুধা হা করে তাকিয়ে থাকে। এর কিছুক্ষণ পরে বলে,,
- কিরে তুই না বাসা থেকে আসার সময় কত করে নতুন ড্রেস কিনে আনলি, তারপর তোর এখন আবার নতুন ড্রেস লাগবে,,
- কি যে বলিস না বাসা থেকে আনতে আনতে তো ওগুলো পুরনো হয়ে গেছে, আচ্ছা চল না কালকে শপিংয়ে যাই,,
- তোর সাথে, মাফ চাই দোস্ত, তুই শপিংয়ে গেলে যা যা করিস,, কবে যে কার দৌড়ানি খাব,,
- শোন শপিংয়ে যাই একটু মজা না করলে চলে বল,,
- তাই বলে কাউকে খোঁচা মারবি,,
- তুই যাবি কিনা বল,,
- আচ্ছা ঠিক আছে,, যদি না যায় তাহলে তুই তো আর ছাড়বি না আমাকে,,
এরপরে দিন বিকেলে প্রমি আর শুধা মেয়েদের শপিং করতে চলে যায়। শপিং মলের মেনি কুইন গুলো দেখে প্রমি একটু দুষ্টামি করতে ইচ্ছে করে।
আগে করে সে প্রতিটা ম্যানিকুইনের নাকে মোচর দিচ্ছে, কান মোচড় দিচ্ছে,, হাত টিপে দিচ্ছে,,
এভাবে দুষ্টুমি করতে করতে আয়ান যে সামনে দাঁড়ানো সেটা সে লক্ষ্য করেনি। তাই সে আইয়ান কেউ ম্যানিকুইন ভেবে তার নাকে মোচড় দেয়,,,।
- What rubbish! ,,,, কি হচ্ছে এই সব...
প্রমি তাকিয়ে দেখে এটায় আয়ান। সাথে সাথে দুই হাত মুখ দিয়ে নিজের মুখ চেপে ধরে, আইনের দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে থাকে। আর সাথে প্রমির বুকে ধুকপুকুনি অনেকটা বেড়ে যায়,,,,
wait for next part....
#তোমায় সেদিন দেখেছিলাম
পার্টঃ পর্ব(01)